প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। এর ফলে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। ইনডেমনিটি আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যাতে তার মতো বিচারহীনতার কষ্টে না পোড়ে সেটাই তিনি চান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার সাংবিধানিক আদালত বিষয়ক সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা একটি শোষণ, বঞ্চনামুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিলেন। সেজন্য স্বাধীনতার মাত্র নয় মাসের মাথায় দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন তিনি। জনগনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ‘এক্সেস টু জাস্টিস’ নিশ্চিত করেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতা বিরোধীরা গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির পিতাকে হত্যা করে; অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। দেশে সামরিক শাসন জারি করে। পবিত্র সংবিধানকে নানাভাবে কাটাছেঁড়া করে এবং গণতন্ত্রকেও হত্যা করার চেষ্টা চালায়। স্বৈরাশাসকেরা সংসদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে সংবিধানে ৫ম ও ৭ম সংশোধনী এনে তাদের সব অপকর্মকে বৈধতা দিয়েছিল। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুজ্জীবীত করে। ফলে, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করার প্রয়াস পায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি চাই, আমার দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। আমাদের মতো যেন বিচারহীনতায় তাদের কষ্ট পেতে না হয়। তারা যেন ন্যায়বিচার পায় এবং দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুনিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ যেন এগিয়ে চলে এবং ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানান উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকারে আসার পর থেকে মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায়, তার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানবাধিকারের কথা শুনি, ন্যায়বিচারের কথা শুনি। সেই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কি আমাদের ছিল না? আমি অনেকবারই হাইকোর্টে গিয়েছি, অনেক অনুষ্ঠানে গেছি। আমি যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি, আমি বারবার এ প্রশ্নটাই করেছি, ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আমরা বিচার পাবো না?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতিটা হচ্ছে, সেটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে। দেশে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে, মানুষের জীবনে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি, এটা একমাত্র হতে পরে যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ হয় এবং দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানে বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই, আছে কিন্তু সেখানে আমাদের প্রশ্ন যে, আমরা কি অপরাধ করেছিলাম? ১৯৮১ সালের আগে ছয় বছর আমাকে প্রবাসে থাকতে হয়, কারণ তখনকার মিলিটারি ডিকটেটর আমাকে আসতে দেবে না দেশে। রেহানাকেও আসতে দেবে না এবং তার পাসপোর্টটাও রিনিউ করতে দেয়নি।

তিনি বলেন, সে অবস্থায় যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার অবর্তমানে নির্বাচিত করা হয়, এক রকম জোর করে, জনগণের সমর্থন নিয়েই আমি দেশে ফিরে আসি। আমি যখন আমার বাবা-মা, ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য মামলা করতে যাই, সেখানে মামলা করা যাবে না। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটা কেমন ধরনের কথা?

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিরা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরাণ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা, সংসদ সদস্য ও বিজ্ঞ আইনজীবীরা।